
ইসলামের দৃষ্টিতে কি জ্যোতিষশাস্ত্র হারাম? হাত দেখা, কোষ্ঠি করা, ঠিকুজি করা কি নিষিদ্ধ?
এর জন্য আমদের আগে জানতে হবে, জ্যোতিষবিদ্যা কি ?
জ্যোতিষবিদ্যার আড়ালে ভন্ড-প্রতারকেরা ফায়দা লুটছে । আসলে জ্যোতিষবিদ্যা- তকদীর, নসীব, ভাগ্য, নিয়তী, কপাল, ফেট, ফরচুন ইত্যাদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ । যারা জ্যোতিষবিদ্যা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন তারা একথা অবশ্যই স্বীকার করবেন । আর যারা এ বিদ্যার গভীরে পৌঁছেননি, তারা তা বুঝেনওনি । আর যারা এ বিদ্যা অধ্যয়ন করেননি তাদেরতো জানার কথাই নয় । তারাতো প্রতারকদের জ্যোতিষ নামে ভাগ্য গণনার কথাই জেনে থাকবেন । সাধারন লোকের এই অজ্ঞতাটুকুর সুযোগই প্রতারকরা নিচ্ছে । আমি চেষ্টা করব পর্যায়ক্রমে জ্যোতিষবিদ্যার পরিচয় তুলে ধরতে ।
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে- জ্যোতিষবিদ্যা কি ? আমি তার জবাবে বলব- জ্যোতিষ কারো ভাগ্য গণনার বিদ্যা নয়, প্রতারকদের ভাগ্য গঠনের বিদ্যা হতে পারে । জ্যোতিষ অনিবার্য কিছু জানেনা, শুধুই সম্ভাবনার কথা বলে । চিকিৎসাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, আবহাওয়াবিজ্ঞান ইত্যাদির মত শুধুই সম্ভাবনার বিশ্লেষণ করতে পারে । চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, আবহাওয়াবিদ যেমন কিছু লক্ষণ, কিছু সূত্র, কিছু হিসাব বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনার কথা বলেন; তেমনি জ্যোতিষবিদ্যাও কিছু লক্ষণ, কিছু সূত্র, কিছু হিসাব ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনার কথা বলেন । কোন জ্যোতিষী যদি অনিবার্য কিছু বলেন, তবে তা তার নিজের কথা, জ্যোতিষবিদ্যার নয় ।
জ্যোতিষবিজ্ঞান বা এস্ট্রোলজি একটি সায়েন্স। এটি হলো সায়েন্স অফ প্রোবাবিলিটিস বা পসিবিলিটিস। অর্থাৎ কী হতে পারে তা নিয়ে অভিমত, ব্যাখ্যা, পর্যালোচনা বা অনুমান - এটাই হলো জ্যোতিষবিজ্ঞান।
আর ইসলামের দৃষ্টিতে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিশিষ্ট আলেমদের অভিমত গ্রহণ করা হয়েছে।আল্লামা হজরত মাওলানা আবদুর রহীম, মাওলানা আলাউদ্দিন আল আজহারী প্রমুখ দেশবরেণ্য আলেমগণ খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, একমাত্র স্রষ্টাই পারেন নিশ্চিতভাবে কোনোকিছু ঘটবে এটা বলতে। কোনো মানুষ বা অন্য কোনো সৃষ্টি তা পারে না। কিন্তু কেউ যখন কোনো সম্ভাবনার কথা বলে, বলে এটা হতে পারে, সেটা ঘটতে পারে, তখন তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এবং এস্ট্রোলজির আলোকে কেউ যদি এই সম্ভাবনার কথা বলে তাহলে তা ইসলামের বৈধতার সীমার মধ্যেই থাকে।
শুধু তাই নয়, পবিত্র কোরআনের সূরা জ্বীনের ২৬-২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘গায়েব বা ভবিষ্যত শুধুমাত্র তিনিই জানেন, যদি না তিনি কাউকে জানান, যেমন তিনি রসূলদের জানিয়েছেন।’ অর্থাৎ জানার পথ খোলা আছে। তিনি যে কাউকে ইচ্ছা ভবিষ্যত জানাতে পারেন, যে কাউকে ইচ্ছা গায়েব জানাতে পারেন, এটা ওনার এখতিয়ারে। আর এটা আল্লাহর একটি আশ্বাসই যে, যে যা জানতে চায়, আল্লাহ সেই জ্ঞান তাকে দিয়ে দেন।
আসলে জ্যোতিষী নিয়ে আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে যে বিরূপ মনোভাব তার মূলে আছে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ আমাদের এখানে অতীতে জ্যোতিষ চর্চা করতেন মূলত ব্রাহ্মণ পন্ডিতরা। সেইসাথে কোরআন-হাদীসের পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাখ্যার মাধ্যমে কট্টরপন্থী একশ্রেণীর ইসলামি চিন্তাবিদ এ বিষয়টিকে ধর্মীয় নিষেধের বেড়াজালে বন্দি করে ফেললেন। অথচ ইসলামের স্বর্ণযুগে যত বড় বড় আরব পণ্ডিত ছিলেন - আল বেরুনী থেকে শুরু করে আল বাত্তানী, আল কিন্দি, আল জারকানি, ইবনে বাজ্জা, ইবনে তোফায়েল, ইবনে আরাবী, ইব্রাহীম আল ফাযারি, আল ফারগানি, আল খারেজমি, আল তারাবি, ওমর খৈয়াম, ইবনে ইউনুস, নাসিরুদ্দিন আল তুসী প্রমুখ ইসলামি মনীষীগণ এস্ট্রলজি চর্চা করেছেন। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা ছিলো পবিত্র কোরআনের বাণী, “নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে। তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হয় এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি কর নি।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১) । পবিত্র কোরআনের ৮৫ নং সূরাটির নাম ‘বুরুজ’ যার মানে রাশিচক্র।
বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা তখন যা ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার পাঠ্যতালিকায় ছিলো এই ইলমে আল নুজুুম যা একইসাথে এস্ট্রোলজি এবং এস্ট্রোনমি দুটোকেই বোঝাতো। এমন কোনো মুসলিম পণ্ডিত ছিলেন না যিনি এস্ট্রোলজিতে দক্ষ ছিলেন না। আধুনিক জ্যোর্তিবিজ্ঞানে বেয়ার’স স্টার চার্ট বা বেয়ারের তারাতালিকা ব্যবহারের আগ পর্যন্ত প্রচলিত ছিলো ‘জিজ-ই-উলুগ বেগ’ বা উলুগ বেগের তারাতালিকা যা প্রণয়ন করেন মধ্যযুগের সবচেয়ে খ্যাতনামা মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী উলুগ বেগ। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে যত নক্ষত্রের নাম রয়েছে এর ৩ ভাগের ১ ভাগই হচ্ছে আরবি নাম।
লেখাটা অন্য একটি ব্লগ থেকে ধার করা!!
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে- জ্যোতিষবিদ্যা কি ? আমি তার জবাবে বলব- জ্যোতিষ কারো ভাগ্য গণনার বিদ্যা নয়, প্রতারকদের ভাগ্য গঠনের বিদ্যা হতে পারে । জ্যোতিষ অনিবার্য কিছু জানেনা, শুধুই সম্ভাবনার কথা বলে । চিকিৎসাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, আবহাওয়াবিজ্ঞান ইত্যাদির মত শুধুই সম্ভাবনার বিশ্লেষণ করতে পারে । চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, আবহাওয়াবিদ যেমন কিছু লক্ষণ, কিছু সূত্র, কিছু হিসাব বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনার কথা বলেন; তেমনি জ্যোতিষবিদ্যাও কিছু লক্ষণ, কিছু সূত্র, কিছু হিসাব ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনার কথা বলেন । কোন জ্যোতিষী যদি অনিবার্য কিছু বলেন, তবে তা তার নিজের কথা, জ্যোতিষবিদ্যার নয় ।
জ্যোতিষবিজ্ঞান বা এস্ট্রোলজি একটি সায়েন্স। এটি হলো সায়েন্স অফ প্রোবাবিলিটিস বা পসিবিলিটিস। অর্থাৎ কী হতে পারে তা নিয়ে অভিমত, ব্যাখ্যা, পর্যালোচনা বা অনুমান - এটাই হলো জ্যোতিষবিজ্ঞান।
আর ইসলামের দৃষ্টিতে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিশিষ্ট আলেমদের অভিমত গ্রহণ করা হয়েছে।আল্লামা হজরত মাওলানা আবদুর রহীম, মাওলানা আলাউদ্দিন আল আজহারী প্রমুখ দেশবরেণ্য আলেমগণ খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, একমাত্র স্রষ্টাই পারেন নিশ্চিতভাবে কোনোকিছু ঘটবে এটা বলতে। কোনো মানুষ বা অন্য কোনো সৃষ্টি তা পারে না। কিন্তু কেউ যখন কোনো সম্ভাবনার কথা বলে, বলে এটা হতে পারে, সেটা ঘটতে পারে, তখন তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এবং এস্ট্রোলজির আলোকে কেউ যদি এই সম্ভাবনার কথা বলে তাহলে তা ইসলামের বৈধতার সীমার মধ্যেই থাকে।
শুধু তাই নয়, পবিত্র কোরআনের সূরা জ্বীনের ২৬-২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘গায়েব বা ভবিষ্যত শুধুমাত্র তিনিই জানেন, যদি না তিনি কাউকে জানান, যেমন তিনি রসূলদের জানিয়েছেন।’ অর্থাৎ জানার পথ খোলা আছে। তিনি যে কাউকে ইচ্ছা ভবিষ্যত জানাতে পারেন, যে কাউকে ইচ্ছা গায়েব জানাতে পারেন, এটা ওনার এখতিয়ারে। আর এটা আল্লাহর একটি আশ্বাসই যে, যে যা জানতে চায়, আল্লাহ সেই জ্ঞান তাকে দিয়ে দেন।
আসলে জ্যোতিষী নিয়ে আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে যে বিরূপ মনোভাব তার মূলে আছে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ আমাদের এখানে অতীতে জ্যোতিষ চর্চা করতেন মূলত ব্রাহ্মণ পন্ডিতরা। সেইসাথে কোরআন-হাদীসের পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাখ্যার মাধ্যমে কট্টরপন্থী একশ্রেণীর ইসলামি চিন্তাবিদ এ বিষয়টিকে ধর্মীয় নিষেধের বেড়াজালে বন্দি করে ফেললেন। অথচ ইসলামের স্বর্ণযুগে যত বড় বড় আরব পণ্ডিত ছিলেন - আল বেরুনী থেকে শুরু করে আল বাত্তানী, আল কিন্দি, আল জারকানি, ইবনে বাজ্জা, ইবনে তোফায়েল, ইবনে আরাবী, ইব্রাহীম আল ফাযারি, আল ফারগানি, আল খারেজমি, আল তারাবি, ওমর খৈয়াম, ইবনে ইউনুস, নাসিরুদ্দিন আল তুসী প্রমুখ ইসলামি মনীষীগণ এস্ট্রলজি চর্চা করেছেন। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা ছিলো পবিত্র কোরআনের বাণী, “নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে। তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হয় এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি কর নি।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১) । পবিত্র কোরআনের ৮৫ নং সূরাটির নাম ‘বুরুজ’ যার মানে রাশিচক্র।
বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা তখন যা ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার পাঠ্যতালিকায় ছিলো এই ইলমে আল নুজুুম যা একইসাথে এস্ট্রোলজি এবং এস্ট্রোনমি দুটোকেই বোঝাতো। এমন কোনো মুসলিম পণ্ডিত ছিলেন না যিনি এস্ট্রোলজিতে দক্ষ ছিলেন না। আধুনিক জ্যোর্তিবিজ্ঞানে বেয়ার’স স্টার চার্ট বা বেয়ারের তারাতালিকা ব্যবহারের আগ পর্যন্ত প্রচলিত ছিলো ‘জিজ-ই-উলুগ বেগ’ বা উলুগ বেগের তারাতালিকা যা প্রণয়ন করেন মধ্যযুগের সবচেয়ে খ্যাতনামা মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী উলুগ বেগ। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে যত নক্ষত্রের নাম রয়েছে এর ৩ ভাগের ১ ভাগই হচ্ছে আরবি নাম।
লেখাটা অন্য একটি ব্লগ থেকে ধার করা!!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন